বিডি বার্তা ডেস্ক : ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) অর্থ আত্মসাৎ মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা।
বুধবার (১৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন দুদক উপপরিচালক শাহজাহান মিরাজের নেতৃত্বে একটি দল। দুর্নীতি দমন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ৭ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিন গতকাল সোমবার (১৮ আগস্ট) দুদক কার্যালয়ে সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। সোমবার রাতে সাহেদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও তা করতে পারেননি কমিশন কর্মকর্তারা। সোমবার রাতেই সাহেদকে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে তাকে দুদক কার্যালয়ে আনা হয়। তবে ওইদিন আর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি।
গত ১০ আগস্ট দুর্নীতির মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে ৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দিয়েছিলেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের জন্য পদ্মা ব্যাংক বা সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে এমআরআই মেশিন কিনতে ২ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করে সাহেদ।
এর আগে গত ২৭ জুলাই দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে সাহেদ, ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. মাহবুবুল হক চিশতীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রিজেন্ট হাসপাতালের এমডি, মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে ও বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের এমডি রাশেদুল হক চিশতী।
গত ২৮ জুলাই সাহেদকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত ৫ আগস্ট তার গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। তবে সাহেদ অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় দুদকের আবেদনের শুনানি হয়নি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি সময়ে আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে ঋণের নামে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান করপোরেট শাখার এক কোটি টাকা (যা সুদাসলসহ ১৫ জুলাই পর্যন্ত স্থিতি ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা) আত্মসাৎ করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ ধারায় মামলা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী/অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী, বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক চিশতি, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ইব্রাহিম খলিল।
এরইমধ্যে গেল ২২ জুলাই এনআরবি ব্যাংক থেকে হাসপাতালের নামে ঋণ বাবদ দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
এদিকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় গত ২৬ জুলাই ঢাকা ও সাতক্ষীরায় দায়ের করা পৃথক ৫টি মামলায় সাহেদকে ফের ৩৮ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। এর আগে প্রথম দফায় গত ১৬ জুলাই তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
করোনার রিপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে গত ৬ জুলাই রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরদিন ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়।
গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাহেদকে গ্রেফতার করে র্যাব।